ধর্ষণ সমাজের এক মরণব্যধী রোগে পরিণত হওয়ার নেপথ্যে:

আমরা বাঙ্গালী এমন এক জাতি, যতক্ষন পর্যন্ত কোন বিপদ নিজের উপর আসবে ততক্ষন তাদের কোন সমস্যা নেই, যতক্ষন না নিজে বিপদে পড়ছে ততক্ষন চুপ করে থাকবে।সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জায়গায় ধর্ষণের ঘটনা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে।

আমরা বাঙ্গালীরা এমনই এক জাতি, যে জাতি রাস্তার কুকুর নিধনের খবর শুনে ব্যানার, ফেস্টুন ,বিভিন্ন পোস্টার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। কিন্তু কোন মা – বোন যদি ধর্ষণ হয় তার কোন খবর প্রকাশ করার চেষ্টা বা ইচ্ছে নেই। কারণ এতে ধর্ষণকারীদের নাম উঠে আসবে বলে। রাস্তার কুকুর থাকলে পরিবেশের উপকার হবে তাই এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন। তাই বলে কি কোন নারী ধর্ষণ হলে কোন ক্ষতি হয় না কারো? হয়ত এতে আপনার আর আমার কিছুই না। কিন্তু চিন্তা করুন ত একবার যে নারী ধর্ষনের শিকার হয়েছে সে নারীর মা বাবার কি অবস্থা, সে নারীর পরিবারের কি অবস্থা?

পৃথিবীর কোন জায়গায় যদি কোন বাঙ্গালী অত্যাচারের শিকার হয় তাহলে ত আমাদের রক্ত গরম হয়ে যায়। কিন্তু যে বা যারা ধর্ষনের শিকার হচ্ছে তারাও ত এই স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। তাহলে তাদের কেন কোন বিচার হচ্ছে না? এই সেপ্টেম্বরেই ত অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে তাদের ও ত স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীন ভাবে চলাফেরার অধিকার আছে। সবারই ত মা বাবা আছে, পরিবার আছে। এরপরেও কেন তাদের উপর এ নির্যাতন করা হচ্ছে?তাদের কোন বিচার হচ্ছে না কেন? তাহলে কি তাদের কোন বিচার পাওয়ার অধিকার নেই? নাকি ধর্ষণকারী সমাজে অনেক ক্ষমতার মালিক বলে বা ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের ডান হাত বামহাত বলে?কই সমাজে ত ধর্ষণকারীদেরকে কোন হয়রানি করা হয় না, তাদেরকে ত কোন সমাজ থেকে বের করে দেয়া হয় না, তাদেরকে ত একঘরে করে দেয়া হয় না। কিন্তু যে নারীরা সমাজে ধর্ষণের শিকার হয় তাদেরকে সমাজের প্রত্যেক জায়গায় হয়রানি হতে হয়, সমাজ তাকে এবং তার পরিবার কে প্রত্যেকটা জায়গায় হেনস্তা করে। কেন?তারা কি ইচ্ছে করে ধর্ষিত হয়েছে? তাহলে তাদেরকে কেন এত হয়রানি হতে হয়, তাদেরকেই কেন হেনস্তা হতে হয় সব জায়গায়?

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জায়গায় প্রায়ই এরকম ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন টেলিভিশন ,পত্রিকায়, অনলাইন পত্রিকায় বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু ধর্ষণের খবরই শুনা যায়, দেখা যায়। কিন্তু কোন জায়গায় দেখলাম না যে কোন ধর্ষণের সঠিক বিচার হয়েছে বলে। হয়ত হয়েছে কয়েকটা তাও যে নারীর পরিবার ও কোন ক্ষমতাবান বলেই হয়ত। কিন্তু যারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে সবার পরিবার ত আর ক্ষমতাবান নয়। আবার কিছু কিছু ঘটনাই অবাক না হয়ে পারিনা। যে বিচার গুলো আদালতে পুলিশের তত্ত্বাবধানে হওয়ার কথা সেগুলো আজকাল ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের মাধ্যমে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে দফারফা হয়ে যায়। সেসব গ্রাম আদালতে যে পক্ষ কোন ক্ষমতা দেখাতে পারে না সে পক্ষ সবসময় দোষী সাব্যস্ত হয় বা সে পক্ষকে অল্প কিছুর বিনিময়ে চুপ করিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের অনেক ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত আছে যেখানে অনেক ধর্ষণের বিচার পর্যন্ত করেছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী কোন গ্রাম আদালতই ধর্ষণও খুনের বিচার করতে পারবে না সে জায়গায় টাকার মাধ্যমে এসব বিচার সম্পন্ন হয় এগুলোতে।

যারা ধর্ষণ করে তাদের বিরুদ্ধে যারাই কোন আওয়াজ করে তাদেরকে কোন না কোন মামলার ভয় দেখিয়ে চুপ করে দেয়ার হয়। যদি কেউ এতেও ভয় না পায় তাহলে এমন ও নজির আছে যেখানে সত্য কথা বলার জন্য জীবন হারাতে হয়েছে। এটাও হয়ত একটা বড় কারণ ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার চেয়ে তারা রাস্তার কুকুর নিধনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। আর বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই ত এরকম মিথ্যে মামলা কয়েক হাজার হয়ত তারও বেশিই আছে যেখানে অনেক সহজ সরল নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাই হয়ত সাধারণ মানুষ ধর্ষণ সহ বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ দিতে ভয় পায়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় হয়ত অন্যের মা বোনের নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়ে নিজের মা বোনের উপর বিপদ চলে আসবে।

সবশেষে একটা কথাই বলার আছে শুধু। সবাই যে একই মন মানসিকতার তাও কিন্তু আমি বলছি না। যারা চুপচাপ থাকে তাদের কথা নাহয়  বাদ দিলাম। কিন্তু যারা প্রতিবাদ করতে চাই তাদের হয়রানির শেষ নেই। নেতাদের হয়রানি, মামলার হয়রানি আরো কত কিছু তাই হয়তবা কেউ আর ইচ্ছে করলেও প্রতিবাদ করে না। কারণ বাংলাদেশের এখন সবাই জানে বাংলাদেশে খারাপের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করলে খারাপ কাজ বন্ধ হোক আর নাহোক যে প্রতিবাদ করছে তার আর আর শান্তি নেই। পক্ষান্তরে রাস্তার কুকুর নিধনের প্রতিবাদ করলে যে নিধন বন্ধ হয়ে যায় সেটাও সত্য কথা। তবু একটা কথাই বলব, রাস্তার কুকুর নিধন হোক আর না হোক ধর্ষণ বন্ধ হওয়া জরুরী। ধর্ষকের মত বেওয়ারিশ কুকুর নিধন হওয়া খুবই জরুরী সমাজকে সুস্থ রাখতে হলে।

লেখক: ফয়সাল আহমেদ,

নির্বাহী সম্পাদক (theukhiyanews.com )